শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনা: অস্থির রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন, এবং সংশোধনের অগ্রগতিহীনতা—এসব কারণে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, যদি কাজ করতে না পারেন, তাহলে এই পদে থাকার মানে কী?

বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে হতাশা ও ক্ষোভের প্রকাশ

উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য এবং সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় সড়ক অবরোধ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব, এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার কারণে তিনি কাজ করতে পারছেন না।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন করেন, “সংস্কারের বিষয়ে তেমন কিছু হচ্ছে না—তাহলে আমি কেন থাকব?”

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বলেন, “তোমরা আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করো। আমি থাকতে চাই না।” তিনি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা ঠেকাতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভালো নির্বাচন না হলে আমাকেই দায়ী করা হবে।”

এ সময় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করেন এবং একটি খসড়া ভাষণও তৈরি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা প্রচার হয়নি।

সন্ধ্যায় এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সজীব ভুঁইয়া এবং মাহফুজ আলমও যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিবিসি বাংলাকে নাহিদের বক্তব্য

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা সকাল থেকেই শুনছি। সেই বিষয়েই আলোচনা করতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই।”

তিনি আরও বলেন, “স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলে—একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর—পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু বর্তমানে আমাকে যেভাবে জিম্মি করা হচ্ছে, তাতে আমি এভাবে কাজ করতে পারব না।”

নাহিদের মতে, অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি “পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।”

তবে তিনি বলেন, “আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছি—আমাদের গণ–আকাঙ্ক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে যেন তিনি শক্ত থাকেন এবং সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যের জায়গায় আনতে চেষ্টা করেন।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন