শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ডিসেম্বরে নির্বাচন জরুরি: সেনাপ্রধান

করিডোর ও বন্দরের মতো উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার থেকেই আসা উচিত

ঢাকা: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মনে করেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারের বলেই উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার (২১ মে) ঢাকা সেনানিবাসে সেনা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অফিসার্স অ্যাড্রেস অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে নির্বাচন, করিডোর, বন্দর, মব ভায়োলেন্স, সংস্কার ও জাতীয় ঐতিহ্যসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন।

‘করিডোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই’

রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, “এটি একটি সংবেদনশীল ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এ ধরনের বিষয়ে জাতীয় স্বার্থই মুখ্য। যা-ই করা হোক না কেন, তা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী কখনোই এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াবে না, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে এবং অন্যদেরও তা করতে দেবে না।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর বার্তা

‘মব ভায়োলেন্স’ বা সংঘবদ্ধ জনতার নামে সহিংসতা সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, “সেনাবাহিনী এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা আর সহ্য করা হবে না।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “৫ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু মহল সেনাবাহিনী ও আমাকে অযাচিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে— এটি দুর্ভাগ্যজনক।”

বন্দর ও অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে স্থানীয় মতামতের গুরুত্ব

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত জরুরি। এটি অবশ্যই নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।”

সংস্কার নিয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ

চলমান ‘সংস্কার’ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, “কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, সে বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ হয়নি। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।”

ঈদে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সহযোগিতার নির্দেশ

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনি সেনা সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, “মানুষ যেন নিরাপদে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে— সে বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।”

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের বিষয়েও জেনারেল ওয়াকার বলেন, “সব সদস্যকে বলেছি নিরপেক্ষ থাকতে এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছি এবং করব।”

জাতীয় ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’

সেনাপ্রধান বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার যেকোনো চেষ্টা অথবা জাতীয় ঐতিহ্য অবমাননার চেষ্টার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। সশস্ত্র বাহিনী এসব বিষয়ে চুপ করে থাকবে না।”

তিনি তিন বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। সব পরিস্থিতিতে এই ঐক্য বজায় রাখতে হবে।”

উপস্থিত ছিলেন দেশের ভেতর ও বাইরে কর্মরত কর্মকর্তারা

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ঢাকাস্থ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সরাসরি অংশ নেন। ঢাকার বাইরে কর্মরত এবং শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

প্রকাশিত: প্রান্তকাল | www.prantokal.com

সম্পাদনা বিভাগ | সংবাদ পাঠাতে: news@prantokal.com


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন