শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বেলুচিস্তানে স্কুলবাসে ভয়াবহ হামলা: নিহত ৫, ভারতীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাকিস্তানের

শিশুদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ, জবাবদিহির হুঁশিয়ারি সেনাবাহিনীর

২১ মে ২০২৫

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে স্কুলগামী শিশুদের একটি বাসে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে চার শিশু ও বাসচালক। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। গুরুতর অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে সামরিক উড়োজাহাজে করে কোয়েটার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে।

হামলাটি বুধবার সকালে বেলুচিস্তানের খুজদার জেলায় ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য মতে, বিস্ফোরকটি আগে থেকে রাস্তায় পুঁতে রাখা হয়েছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে বাসটি লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ভারতের দিকে পাকিস্তানের অভিযোগের তীর

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এই হামলার জন্য সরাসরি ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, “এই বর্বরোচিত হামলা ভারতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত, যারা পাকিস্তানের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী প্রক্সিদের ব্যবহার করছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ভারত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে নিরীহ শিশু ও বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে, যা তাদের নৈতিক দেউলিয়াপনা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি ঘৃণার প্রমাণ। এই কাপুরুষোচিত কাজের জবাব দিতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত।”

প্রতিরোধের ঘোষণা ও তদন্তের অঙ্গীকার

পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ ধরনের হামলার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, “যে বা যারা এই হামলায় পরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং বাস্তবায়নে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

সেনাবাহিনী একে ‘জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, “যে হাত শিশুদের রক্তে রঞ্জিত, তা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জনগণের সহায়তায় ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদকে পাকিস্তানের মাটি থেকে নির্মূল করা হবে।”

আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ

এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার ঘটনায় ভারতকে অভিযুক্ত করে পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে একটি চাপ তৈরি করতে চাইছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বেলুচিস্তানে বারবার এমন হামলা এবং এর পেছনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ একটি বড় আঞ্চলিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়েই বেলুচিস্তানে চীনা প্রকল্প ও নিরাপত্তা স্থাপনায় একাধিক হামলা হয়েছে, যেখানে পাকিস্তান সরকার বরাবরই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছে।

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি এই হামলাকে ‘জাতিগত বিভাজন উসকে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হব এবং বেলুচিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনব।”

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে জোর

হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি ও ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে হামলার পেছনে সম্ভাব্য যোগসূত্র ও নেটওয়ার্ক শনাক্তে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বেলুচিস্তানের মতো অস্থিতিশীল অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারী শিশুদের লক্ষ্য করে এমন হামলা পাকিস্তানজুড়ে তীব্র নিন্দার সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাস প্রতিরোধে আরও সমন্বিত উদ্যোগের দাবি জানানো হয়েছে নানা মহল থেকে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন