বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

যুবকদের হৃদয়ে শান্তির দীপ্তি: সমস্যায় জর্জরিত সময়ে ইসলামের দিশা

– তরুণদের জন্য বিশেষ নিবন্ধ

এই সময়ের তরুণরা আজ দ্বিধা ও দিশাহীনতায় ঘেরা এক বাস্তবতার মুখোমুখি। পড়াশোনা, ক্যারিয়ারের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সামাজিক প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তির আসক্তি, পারিবারিক প্রত্যাশা—সব মিলিয়ে অনেকেই এক মানসিক ভার বয়ে চলেছে। অনেকে নিজের জীবনকে মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে, কেউ কেউ হারিয়ে ফেলে জীবনের উদ্দেশ্য। এর মাঝে ইসলাম হতে পারে একজন তরুণের আলোকবর্তিকা, যা তাকে সত্যিকারের শান্তি, আত্মবিশ্বাস ও জীবনের ভারসাম্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্ত হয়। কুরআনে বলা হয়েছে:

“নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।” (সূরা রা’দ: ২৮)

তরুণ বয়সে নানা রকম দুশ্চিন্তা ও হতাশা মানুষের মনে ঘুরপাক খায়। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর স্মরণ—তাসবিহ, দোয়া, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত—একটি অদৃশ্য শক্তি এনে দেয়, যা বিশ্বাস ও মানসিক শক্তিকে দৃঢ় করে।

নামাজ হচ্ছে আত্মার প্রশান্তির আধার। এটি শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, বরং জীবনের প্রতিটি সংকট মোকাবেলায় এক অনন্য প্রশিক্ষণ। সময়ানুবর্তিতা, আত্মশৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ—এসবই একজন নামাজি তরুণের জীবনযাত্রায় এসে যায় সহজভাবে। রাসূল (সা.) বলেন:

“নামাজ আমার চোখের শীতলতা।” (সুনান নাসাঈ)

যে যুবক নিয়মিত সালাত আদায় করে, তার অন্তরে নৈতিক দৃঢ়তা ও আল্লাহর নৈকট্য জন্ম নেয়।

জীবনে ব্যর্থতা, প্রত্যাখ্যান ও কষ্ট আসবেই। ইসলাম শেখায়—এসব সময় ধৈর্য ধরো, থেমে যেও না। আল্লাহ বলেন:

“সবর করো, নিশ্চয়ই ধৈর্যের সঙ্গে রয়েছে সাফল্য।” (সূরা ইনশিরাহ)

তরুণ বয়সের চ্যালেঞ্জগুলো ধৈর্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করতে হয়, কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।

যুব সমাজের শক্তি ও সময় সবচেয়ে মূল্যবান। যারা অলসতা বা অর্থহীন আনন্দে সময় অপচয় করে, তারা একসময় হতাশ হয়ে পড়ে। ইসলাম উৎসাহ দেয়—তোমার সময় ও শক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করো, সমাজের উপকারে লাগাও, নিজের উন্নয়নে লাগাও। রাসূল (সা.) বলেন:

“তোমার যুবকালকে গনিমত মনে করো বার্ধক্যের আগে।”

এই বয়সেই তোমাকে স্থির হতে হবে, গড়তে হবে চরিত্র, অর্জন করতে হবে জ্ঞান ও নৈতিকতা।

আজকের তরুণদের বড় চ্যালেঞ্জ পর্নোগ্রাফি, মাদক, অবৈধ সম্পর্ক ও স্ক্রিন আসক্তি। এগুলো ক্ষণিকের আনন্দ দিলেও ধ্বংস করে চরিত্র, আত্মা ও ভবিষ্যৎ। ইসলাম এসব থেকে দূরে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন:

“তুমি যদি তোমার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানকে সংযত করো, আমি তোমার জান্নাতের জামিন হব।” (তিরমিজি)

আত্মনিয়ন্ত্রণই যুবকের প্রকৃত সৌন্দর্য।

তরুণ ভাই, এই পৃথিবী তোমাকে অনেক কিছু শেখাবে, অনেক কিছু টানবে—কিন্তু মনে রেখো, সত্যিকারের শান্তি আসবে তখনই, যখন তুমি আল্লাহর দিকে ফিরবে, নিজের আত্মাকে গড়বে, এবং কল্যাণকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে।

আসো, আমরা যেন নামাজে দৃঢ় হই, দোয়া করি, খারাপ অভ্যাস ছাড়ি, আর নিজের জন্য নয়, সমাজ ও উম্মাহর জন্য বাঁচি। শান্তি বাইরে নয়—তোমার ভিতরেই।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন