শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, তবে প্রয়োজন হলে প্রস্তুত: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চান না, তবে ইউরোপ যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায়—মস্কো প্রস্তুত আছে। রাশিয়া সফররত মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, পুতিন ইউরোপীয় সরকারগুলোর বিরুদ্ধে শান্তি প্রক্রিয়া নষ্ট করার অভিযোগও তুলেছেন। তাঁর দাবি—ইউরোপ এমন শর্ত দিচ্ছে যা রাশিয়ার পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। কারণ, ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থেকে বিরত রাখছে।

পরে মস্কোতে উইটকফ ও কুশনারের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পুতিন বৈঠকে অংশ নেন। বিবিসি বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে দুজনকে পুতিনের সামনে আসনে বসে থাকতে দেখা যায়।

শান্তি আলোচনা নিয়ে টানাপোড়েন

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা খসড়া শান্তি প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পর ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। প্রস্তাবটিতে ন্যাটো সম্প্রসারণ রোধ, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে দেওয়া এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা সীমিত করার মতো বিষয় রয়েছে—যা মস্কোর প্রধান দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইউরোপীয় দেশগুলো পাল্টা প্রস্তাব দেয়। পরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানায়, তারা যুদ্ধের ইতি টানতে একটি “পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো” তৈরি করেছে। পুতিন বলেন, চলমান আলোচনাগুলো এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নয়; বরং ভবিষ্যৎ চুক্তির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনার জন্য কিছু নীতি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প বারবার ঘোষণা দিয়ে আসছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত থামাতে চান। তবে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে রকম কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

ইউক্রেনে পশ্চিমা সহায়তা আত্মসাতের অভিযোগ

ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই আজারভ দাবি করেছেন—পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তার মধ্যে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকর্তা আত্মসাত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলিয়ে ইউক্রেনকে মোট ৩৬ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।

পোকরোভস্ক দখল নিয়ে বিভক্ত দাবি

গত সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক রুশ বাহিনী দখলে নিয়েছে বলে মস্কো জানিয়েছে। পুতিন এই অগ্রগতিকে “গুরুত্বপূর্ণ জয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেন, এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামগ্রিক কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

তবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে—শহরটি এখনো পুরোপুরি রুশদের নিয়ন্ত্রণে যায়নি, সেখানে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

পুতিন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের শুরুতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এই পদক্ষেপগুলো সেদিকে এগোচ্ছে।”

যদি পোকরোভস্ক রাশিয়ার হাতে স্থায়ীভাবে চলে যায়, তবে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের দিকে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি সহজ হবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

দোনবাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা রাশিয়ার প্রধান যুদ্ধ-লক্ষ্য, যেখানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক—দুই প্রদেশই অন্তর্ভুক্ত। লুহানস্কের অধিকাংশই ইতোমধ্যে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন