শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

পূর্বাচলে ১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৫’

বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে তিন দিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনী

আগামী ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো–২০২৫’, যেখানে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে, যা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও শিল্প খাতের বৈদেশিক বাজার সম্প্রসারণে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

দুই পর্বে বিভক্ত বাণিজ্যমেলা আয়োজন

সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ) নতুন কাঠামোয় দুই পর্বে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

  • প্রথম পর্ব: ডিসেম্বর মাসে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো–২০২৫ (৩ দিনব্যাপী)।
  • দ্বিতীয় পর্ব: আগামী জানুয়ারিতে মাসব্যাপী ‘ঢাকা ট্রেড ফেয়ার (ডিটিএফ)’ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশীয় শিল্প, পণ্য, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেবেন।

এই নতুন ব্যবস্থায় পূর্বাচল এক্সিবিশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাণিজ্য প্রদর্শনীর সমন্বিত আয়োজন নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইপিবি।

গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো–২০২৫ এ থাকছে যেসব পণ্য ও সেবা

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় থাকবে ইলেকট্রনিকস, গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, আইটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্যপ্রসেসিং, নির্মাণ উপকরণ, ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি—এই খাতের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিনিধিরা।

এছাড়া চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ২০টি দেশ এবারের মেলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে।

ইপিবি কর্মকর্তারা বলছেন, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ডিং ইমেজ’ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন রপ্তানি গন্তব্য তৈরির ক্ষেত্রে।

আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো

বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি এশিয়ার অন্যতম আধুনিক মেলা প্রাঙ্গণ, যেখানে রয়েছে—

  • ৮০ হাজার বর্গমিটারের প্রদর্শনী এলাকা
  • ৮০০টির বেশি প্রদর্শক বুথ স্থাপনের সুযোগ
  • কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওয়াই-ফাই সুবিধা
  • পর্যাপ্ত পার্কিং, কনফারেন্স জোন ও মিডিয়া সেন্টার

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “এই সেন্টার এখন আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুত। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতিতে বাংলাদেশে সোর্সিং হাব গড়ে উঠবে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী ও ইপিবির বক্তব্য

বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন,

“বাংলাদেশের শিল্প ও রপ্তানি খাত এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো হবে আমাদের পণ্যের গুণমান ও সক্ষমতা প্রদর্শনের বড় মঞ্চ।”

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা বেগম বলেন,

“গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো–২০২৫ মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্ববাজারে নিজেদের স্থিতি শক্তিশালী করার সুযোগ এনে দেবে।”

উদ্বোধন ও অংশগ্রহণ

এক্সপোটি ১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মেলায় প্রবেশের জন্য অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দর্শনার্থীরা www.globalsourcingexpo.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।

সারসংক্ষেপ

‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো–২০২৫’ বাংলাদেশের বাণিজ্য ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করতে যাচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগ, রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই মেলা কেবল প্রদর্শনী নয়—এটি হবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সোর্সিং হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম পদক্ষেপ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন