শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচন-পূর্ব অস্থিতিশীলতা রুখতে অস্ত্র উদ্ধার তৎপরতা জোরদার, ৮০% উদ্ধার শেষ: সেনাসদর

ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চলতি নিরাপত্তা অভিযানে এ পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্রের শতকরা ৮০ ভাগ উদ্ধার করেছে। বাকি ২০ ভাগ অস্ত্রও আগামী নির্বাচনের আগে জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “যাতে নির্বাচনের সময় এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে কোনো চক্র অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের ছিনতাই হওয়া অস্ত্রও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের দিকনির্দেশনার অপেক্ষা

নির্বাচনকালে পুলিশের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না—এ প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন থেকে এখনও কোনো দিকনির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি রাখছি। কমিশনের নির্দেশনা পেলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহায়তা করবে।”

গুমের অভিযোগের তদন্ত চলমান

বিগত সময়ে গুমের সঙ্গে সেনাসদস্যদের নাম আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সেনাসদস্য বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে কর্মরত থাকায় তাদের সেনাবাহিনী সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে গুমের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “ভুক্তভোগী পরিবারগুলো চাইলে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে। আমরা তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করব,” বলেন কর্নেল শফিকুল।

মব ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তৎপর

ঢাকায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ঘিরে মব তৈরি করে হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল বলেন, “মবের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ তৎপর। সাবেক সিইসি’র ঘটনায় সেনা টিম তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের পটিয়ায়ও সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান পরিচালনা করেছে। মহাসড়ক অবরোধ তুলতে কাজ করেছে। কোনো গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করলে, খবর পেলে সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।”

কেএনএফ বিরোধী অভিযান

পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে বলেও জানান কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে সেনা অভিযানে কেএনএফ এর এক কমান্ডারসহ দুই সদস্য নিহত হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি এসএমজি, একটি রাইফেল এবং বিপুল গোলাবারুদ।”

তিনি জানান, কেএনএফ প্রধান এখনো বার্মায় (মিয়ানমার) রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে পুরো নেটওয়ার্কের তথ্য বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান

কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল বলেন, “গত এক মাসে সেনাবাহিনী ৫৬ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি কিশোর গ্যাং সদস্য ধরা পড়েছে।”

তিনি আরও জানান, গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর অভিযানে:

  • ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার
  • ৯৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার
  • ৫৬২ জন অপরাধী গ্রেফতার

গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

মাদকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানও অব্যাহত আছে। গত দুই সপ্তাহেই গ্রেফতার হয়েছে ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ী। আগস্ট থেকে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট ৫ হাজার ৫২১ জনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী।

কর্নেল শফিকুল আরও জানান, ২১ জুন খুলনা জেলার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুলবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি পিস্তল, দেশীয় পিস্তল, শটগান এবং গোলাবারুদ। এছাড়া গত ২৯-৩০ জুন মীর হাজিরবাগ আল-আমিন গ্রুপের দুই সদস্য আনিছ ও হাসানকে গ্রেফতার করে তিনটি বিদেশি পিস্তল, এক বিদেশি রিভলভার, তিনটি ম্যাগাজিন এবং ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। সন্ত্রাস, অস্ত্র ও বিশৃঙ্খলা রোধে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছে।”

সেনাসদরের এই বিস্তারিত ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হলো, নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন