শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

‘মহান আল্লাহর নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য’

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন।সংবিধান হিসাবে দিয়েছেন মহা গ্রন্থ আল কোরআন।আল কোরআনে রয়েছে সব সমস্যার সমাধান। পরস্পর পরস্পরের সাথে কিভাবে কথা বলব, সে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা নিজের অনুগ্রহে মানুষকে ভাষা দান করেন।ভাষা আমাদের জন্য নিয়ামত।আল্লাহ বলেন,‘আর আমি কি তাকে দেই নি জিহ্বা ও ওষ্ঠদ্বয়’।(সুরা বালাদ)।পৃথিবীতে হাজার হাজার ভাষা রয়েছে।অঞ্চল ভেদে মানুষের চেহারায় যেমন ভিন্নতা রয়েছে,তেমনি ভাবে রয়েছে ভাষার ভিন্নতা। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,‘তার আরও এক নির্দশন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয়ই এতে ঞ্জানীদের জন্যে নির্দশনাবলী রয়েছে’।(সুরা রুম-২২)। মোট কথা,আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা মুখ দিয়ে কথা বলি,মনের ভাব প্রকাশ করি।

মহান আল্লাহ হজরত রাসুল (দ) এর উপর নাজিল করেন আল কোরআন। ভাষা শুদ্ধতার প্রধান উৎস হলো আল কোরআন। আল কোরআনে,আরবী ভাষা,ব্যকরন,কাব্য,সংস্কৃতি,সভ্যতা ও সাহিত্যের সব উপকরন নিহিত রয়েছে।মহান আল্লাহ আঠারো হাজার সৃষ্টির মধ্যে মানব জাতিকে ভাষার জন্য শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।এরশাদ হচ্ছে,তিনিই মানুষকে বায়ান তথা ভাব প্রকাশের শিক্ষা দিয়েছেন;।(সুরা রাহমান)।আরো বলেন,‘মানুষের সাথে উত্তম কথা বল’।( সুরা বাকারাহ-৮৩)।উত্তম কথা মানে বিনয়- ন¤্রতা ও সম্মান জনক ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাথে শিষ্টাচার রজায় রাখার নিদেশ দিয়েছেন।এরশাদ হচ্ছে-‘আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না,তবে উত্তম পন্থায়’।(সুরা ইসরা-৪৬)।আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম পালন করা ফরজ। অস্বীকার কারী কাফির।সে হিসাবে পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য কোরআন অত্যন্ত শুক্ষè দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-তাদের (মাতা-পিতা) প্রতি সামনে উফ শব্দাট পর্যন্ত বলো না এবং তাদের ধমক দিও না;।সুরা ইসরা-২৩)। আল কোরআনের বানী দ্বারা বুঝা গেল যে পিতা- মাতার প্রতি বিনয়-ন¤্র ও সম্মানের সাথে কথা বলতে হবে।এর ব্যতিক্রম করা যাবে না।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত রাসুল (দ) বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। বিশ^ নবী (দ) জন্মের পর দুধ পান করার জন্য মা হালিমা (রা) এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। দুধ মায়ের দুধ পান করা আরবের স্বাভাবিক নিয়ম ছিল। শিশুর শারীরিক গঠন ও বিশুদ্ধ ভাষা শিখার জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হতো।গ্রামে বিশুদ্ধ বাচন ভঙ্গি পথ মসৃন হতো।হজরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা)একদিন হজরত রাসুল (দ)কে বললেন,আপনি খুবেই বিশুদ্ধ ভাষী।প্রতি উত্তরে নবীজী (দ) বললেন,আমি কুরাইশ বংশের সন্তান।আর আমি দুধ পান করেছি সা’দ গোত্রে’। রাসুল (দ) এর বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলা প্রিয় নবীজীর সুন্নত।রাসুল (দ) সাহাবায়ে কিরামকে শুদ্ধ ও মার্জিত ভাষায় কথা বলার প্রতি গুরুত্বরোপ করেছেন।

বিশ^ নবী (দ) ছিলেন ভাষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দক্ষতার অধিকারী।তিনি ঘোষনা করেন,‘আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোর্ধক বাক্য শিক্ষা দেওয়া হয়েছে’।(বুখারী)। বিশ^ নবী (দ) এর ভাষায় কোন অশুদ্ধি,অমার্জিত শব্দ বা ব্যকরনগত ত্রুটি ছিল না।তিনি এমন ভাষায় আল কোরআন প্রচার করেছেন,যা আরবের শ্রেষ্ঠ্য কবি ও ভাষাবিদদের মাথা নত করে দিয়েছিলেন।আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,‘রাসুল )দ) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাদিক স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষী’।(তিলমিযি)। হজরত রাসুল (দ) আরো বলেন,‘ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য,যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে ! ধ্বংস তার জন্য’।(আবু দাউদ)। শুদ্ধ ভাষা সর্বদা ব্যবহারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আতিœক পরিশুদ্ধি অর্জন করে। ন¤্র ভাষা সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।এরশাদ হচ্ছে-হজরত রাসুল (দ) বলেন,মিষ্টি কথা বলা একটি সাদাকাহ (দান) করার স্যায়’। (মুসলিম)।বিশ^ নবী (দ) শিশুদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন।তিনি বলেন,‘ন¤্রতা কোন বিষয়ে যুক্ত হলে তা তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়’।(মুসলিম)।

আমরা আদি যুগ,মধ্যম যুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে বস বাস করছি। যোগাযোগের সামাজিক মাধ্যম ও চ্যাটিং প্লাট ফর্মে ভাষার অপব্যবহার করছি। ভুলে গেছি ইসলামের কথা।ইসলাম ধর্মে ডিজিটাল ভাষা অথবা কথোপকথনে গীবত,মিথ্যা ও অশালীনতা হারাম। আল্লাহ এরশাদ করেন,‘মানুষ যে কথাই উচ্চারন করে, তা রেকর্ড করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে’।(সুরা কফ)।এ জন্য অনলাইনে প্রত্যেক মোমিন মুসলমানের জন্য শব্দের দায়বদ্ভতা সর্ম্পকে সচেতন হওয়া জরুরী।মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,‘আর যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে’।(সুরা মুমিনুন)।আরো বলা হয়েছে,‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহব্বান করুন ঞ্জানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তম রুপে এবং তাদেও সাথে বির্তক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঔ ব্যক্তি সর্ম্পকে বিশেষভাবে ঞ্জাত রয়েছেন,যে তার পথথেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন তাদেরকে- যারা সঠিক পথে আছে’। (সুরা নহল)।

ইসলামী সভ্যতা,সংস্কৃতি.ভাষা ও সাহিত্যের ধারক বাহক।আল কোরআনের মাধ্যমে সভ্যতা,সংস্কৃতি,ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছে। ভাষা,কলা কৌশল,অলংকার শাস্ত্র ও কাব্য সৌন্দর্য আল কোরআনের যুক্ত রয়েছে।আরবী বিশুদ্ধ ভাষা ছাড়া কোরআন ও হাদীসের গভীর ঞ্জান অর্জন করা অসম্ভব। ভাষা হলো ঈমানের আয়না। ভাষা ব্যক্তির অন্তরের পবিত্রতা ও সমাজে নৈতিকতার প্রভাব বিস্তার করে।বিশুদ্ধ ভাষা ছাড়া পরিপুর্ণ মুসলিম চরিত্র গঠন করা সম্ভব নয়।আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আল কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসরণই করাই আমাদের কাম্য। প্রত্যেক মোমিন মুসলমানের উচিত বিশুদ্ধ ভাষা উচ্চারন করা।এই হোক আমাদের কাম্য।

লেখক পরিচিতি: আসাদুজ্জামান আসাদ, সহকারী অধ্যাপক, গ্রন্থকার।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন