শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় আজ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার প্রথম রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আজ সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করারও কথা রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম যার বিচারিক নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ রায় ঘোষণা করবেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযোগ

এই মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বারবার দাবি করেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুলিবর্ষণ ও নির্যাতন–সবকিছুর প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তাঁকে সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা বা সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে বর্ণনা করেছে প্রসিকিউশন।

তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এখনো পলাতক; দুজনই ভারতে অবস্থান করছেন। অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন গ্রেপ্তারের পর ট্রাইব্যুনালে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়ে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।

‘লেথাল উইপন ব্যবহারে’ নির্দেশনার কথা জবানবন্দিতে

অ্যাপ্রুভার মামুন আদালতে বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে পেয়েছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই–আগস্টে মারণাস্ত্রের ব্যবহারে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র–জনতা নিহত এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আহত হন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দাবি করেছে। তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিহত ও আহত জুলাই–যোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণেরও আবেদন জানানো হয়েছে।

পাঁচটি অভিযোগ

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ হলো—

১) উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান,

২) আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ,

৩) রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা,

৪) চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা,

৫) আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা গেছে।

পলাতক হওয়ায় আপিলের সুযোগ নেই

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন জানান, রায়ে শাস্তি হলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান আপিল করতে পারবেন না, কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হতে হয়।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলো ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো আইনি মূল্য বহন করে না, যেহেতু তিনি আদালতে হাজির হয়ে সেসব বলেননি।

৩৯৭ দিনের বিচারযাত্রা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। একই বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম বিবিধ মামলা রুজু হয়।

৩৯৭ দিনের বিচার–প্রক্রিয়ায় ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়। ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের অতীত ও অন্যান্য মামলা

২০১০ সালে যাত্রা শুরুর পর মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

বর্তমানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন—

• জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মামলা (আজ রায়)

• ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর–সংক্রান্ত মামলা

• গুম–সংক্রান্ত দুটি মামলা

আদালত অবমাননার সাজাও বহাল

চলতি বছরের ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন