শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে: রিজভী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপি নেতার অভিযোগ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ভারত থেকে অডিও বার্তা পাঠিয়ে নাশকতার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, এমনকি একজন পুড়ে মারা গেছেন।”

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল আয়োজিত ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী।

‘নাশকতা করে চোরা পথে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন’

রুহুল কবির রিজভী বলেন,

“শেখ হাসিনা এক হাজার চারশর বেশি শিশু, কিশোর ও তরুণকে হত্যা করে এখন বিদেশে বসে নতুন করে নাশকতা ছড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ এখনো চোরা পথে দেশে ফেরার স্বপ্নে বিভোর।”

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের হাতে এখনো প্রচুর অর্থ রয়েছে—

“বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু ও ফ্লাইওভার প্রকল্পসহ নানা উন্নয়ন কাজের টাকা তাদের হাতে আছে। সেই অর্থ ব্যবহার করেই তারা আবার নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।”

‘ফ্যাসিবাদের ছোবলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’

বিএনপি নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

“ফ্যাসিবাদ জন্মালে গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যম, নির্বাচন কমিশন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—সবই আক্রান্ত হয়। শেখ হাসিনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও রেহাই পায়নি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বসতে পারেনি, চায়ের দোকানেও তাদের জায়গা হয়নি।”

রিজভীর ভাষায়,

“শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন, কিন্তু সেই ফ্যাসিবাদ এখন ইতিহাস।”

‘জিয়াউর রহমান আত্মপরিচয়ের সংকট দূর করেছিলেন’

বিএনপির এই নেতা বলেন,

“বাহাত্তরের পর শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে বাঙালি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, যা ছিল আত্মপরিচয়ের সংকট সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা। জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠা করে পাহাড়ি, সমতল ও নদীর মানুষের মধ্যে ঐক্য এনেছিলেন। এই জাতীয়তাবাদই আজকের বাংলাদেশি পরিচয়ের ভিত্তি।”

তিনি আরও বলেন,

“শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এই জাতীয় পরিচয় মুছে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি।”

‘৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক ভূমিকা’

রিজভী বলেন,

“আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা বাকশাল কায়েম করে রাজনীতিকে দমন করেছিল। জিয়াউর রহমানই জনগণকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। তাই ৭ নভেম্বরের বিপ্লব কখনো অস্বীকার করা যাবে না।”

ছাত্ররাজনীতির দায়িত্ব ও ভূমিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ইতিহাস স্মরণ করে রিজভী বলেন,

“ছাত্রসংগঠনের কাজ হলো জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরি করা। ছাত্ররা নির্বাচিত হলে তাদের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করা, অন্য কিছু নয়।”

সভায় অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন,

“ছাত্রদল কখনো গণতন্ত্রের নীতি থেকে সরে যায়নি। সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরাজয় এলেও আমরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাব।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী) এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল হক।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউট্যাবের রাজশাহী শাখার সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন