শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

দিল্লির ষড়যন্ত্রে ১৩ নভেম্বর নাশকতার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ: মিয়া গোলাম পরওয়ার

পল্টনের মহাসমাবেশে পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত নেতার অভিযোগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, দিল্লির ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’-এর নামে নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, “দেশে যখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে, তখনই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।”

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন ময়দানে সমমনা আটটি রাজনৈতিক দলের পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

‘পল্টনের সমাবেশ আগামী রাজনীতির মাইলফলক’

গোলাম পরওয়ার বলেন,

“স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ে এই বিশাল মহাসমাবেশ আগামী দিনের রাজনীতির জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে। জাতি এখন অপেক্ষা করছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের।”

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নয় মাস ধরে সাংবিধানিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছিল।

কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিকে দুর্বল করছে।

গণভোট ও নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

জামায়াতের এই নেতা বলেন,

“যারা বলছেন একদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন হবে, তারা বাস্তবতা বোঝেন না। জুলাই জাতীয় সনদে ৪৮টি বিষয়ে সাংবিধানিক পরিবর্তন এসেছে—যেখানে দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান আলাদা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট এবং স্বাধীন নিয়োগ কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব রয়েছে। এইসব সংস্কারের আইনি ভিত্তি একমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন,

“যদি গণভোট আইনি ভিত্তি না হয়, তবে জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাবে।”

সরকারের বৈধতা ও আদালতের বিতর্ক

হাইকোর্টের আর্টিকেল ১০৬–এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন,

“সরকারের বৈধতা নিয়ে যেসব ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা এখন আইনি বিতর্কে পরিণত হয়েছে। ফলে গণভোটের মাধ্যমেই জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ সুগম হতে পারে। অন্যথায়, জুলাই সনদের সংস্কারগুলো কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন,

“আমরা পাঁচ দফা দাবির মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত খুনিদের বিচারের দাবি জানিয়েছিলাম। এখন ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে, আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।”

তিনি অভিযোগ করেন, নভেম্বরে কয়েকটি মামলার রায় ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসতেই ‘ফ্যাসিস্ট শক্তি’ দেশজুড়ে ককটেল হামলা ও গাড়িতে আগুন দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,

“আমরা খবর পাচ্ছি, ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়েছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—অবিলম্বে অভিযান চালিয়ে ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তার করুন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি করুন এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করুন। জাতি সহযোগিতা করবে।”

সমাবেশের আয়োজন

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম (পীরসাহেব চরমোনাই)।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ছিলেন প্রধান অতিথি।

এ সময় সমমনা আট দলের নেতারা অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন