শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

‘লকডাউন’ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে সরকার

সন্দেহভাজন হলেই আটক করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সম্ভাব্য নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

মঙ্গলবার রাজধানীর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য

আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) অনলাইনে ‘লকডাউন’ পালনের আহ্বান জানিয়েছে। এদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—যিনি এখন রাজসাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত।

সরকারি সূত্র জানায়, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযান

বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, বরিশাল অঞ্চল থেকে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ঢাকায় এসে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের তৎপরতা নজরদারিতে রয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—এই নেতা-কর্মীদের সম্ভাব্য অবস্থান চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানীতে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি নিষিদ্ধ থাকবে। কারণ, নাশকতাকারীরা সড়কে অগ্নিসংযোগে এসব তেল ব্যবহার করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য এসেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক বার্তা

সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক প্রতিনিধি বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, কারণ অলিগলিতে পাহারা দেওয়া বাহিনীর পক্ষে কঠিন।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়, সব রাজনৈতিক দলকে তাদের তৎপরতা ও মাঠ পর্যায়ের নজরদারি বাড়াতে বলা হবে।

নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা জোরদারে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

  • পুলিশ সদস্যদের জন্য ‘বডি-ওর্ন’ ক্যামেরা কেনা হবে, যা মাঠপর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
  • র‍্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাকে পরিবর্তন আনা হবে, যাতে নতুন রং ও চিহ্ন সহজে শনাক্তযোগ্য হয়।
  • সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কোনো সন্ত্রাসী যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সতর্কবার্তা

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,

“দেশে কোনো ধরনের নাশকতা বা অরাজকতা সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কঠোর হাতে দমন করবে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।”

তিনি আরও জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে এবং যেসব অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, সেগুলো দ্রুত উদ্ধার করা হবে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে মাদক ছড়িয়ে পড়া রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন,

“এসব ঘটনায় নতুন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলকেই অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সারসংক্ষেপ

‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে দেশজুড়ে উত্তেজনার মধ্যেই সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছে। সন্দেহভাজনদের তাৎক্ষণিক আটক, খোলা জ্বালানি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা, সীমান্তে কঠোর নজরদারি এবং নির্বাচনি প্রস্তুতিতে প্রযুক্তি-নির্ভর নিরাপত্তা জোরদার—সব মিলিয়ে আসন্ন সময়ের জন্য সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন