শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

মানবপাচারের মামলায় বায়রার সাবেক নেতা ফকরুল গ্রেপ্তার

প্রতিশ্রুত কাজ না দিয়ে বিদেশে আটকে রেখে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার (BAIRA) বহুল আলোচিত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মানবপাচারের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোমবার রাতে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন, বলে নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার।

তিনি জানান, ফখরুল ইসলামকে মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হবে।

মামলার পটভূমি

রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী আরইউএল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার রুবেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিন প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিতে শ্রমিক পাঠানোর নামে ফখরুল ও জসিম রুবেল হোসেনের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করেন। প্রতি শ্রমিকের জন্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৫৫ জন শ্রমিকের নামে অর্থ গ্রহণ করেন তারা।

বাদী রুবেল জানান, ফখরুল ও জসিম বিভিন্ন কোম্পানির (যেমন New Vision Green Land SND, Chai Chang Food Industry SND, LBS Industries) ভিসা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পাসপোর্ট ও অর্থ গ্রহণ করেন। তবে চুক্তি মোতাবেক চাকরি না দিয়ে ২৪ জন শ্রমিককে মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পুনরায় অর্থ আদায় করেন।

শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাত

মামলায় বলা হয়, শ্রমিকদের প্রতিশ্রুত প্রতিষ্ঠানে না পাঠিয়ে তাদেরকে অন্যত্র আটকিয়ে রাখা হয়। নির্যাতনের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হয়। পরবর্তীতে বাদী রুবেল বিষয়টি জানতে পেরে ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি মালয়েশিয়ায় সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত না দিয়ে হুমকি-ধমকি দেন।

বাদীর দাবি, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের কাজ না দিয়ে এবং অর্থ ফেরত না দিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা করে শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।

আগেও প্রতারণার অভিযোগ ছিল ফখরুলের বিরুদ্ধে

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ফখরুল ইসলাম আগেও বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণার একাধিক মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। অতীতে মানবপাচার আইনে মামলা হলেও তিনি আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে দায় এড়াতে সক্ষম হন।

বায়রার সাবেক এই নেতা বিভিন্ন সময়ে নিজেকে রিক্রুটিং ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য

বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, “গ্রেপ্তার ফখরুল ইসলাম মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের মামলার প্রধান আসামি। তদন্তে আমরা আরও ব্যক্তির সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছি। তার সহযোগীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন