শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চেয়ে আপিল শুনানি শুরু

বিতর্কিতভাবে বাতিল হওয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দায়ের করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, আর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

পটভূমি ও আপিলের ইতিহাস

এর আগে গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেয়। এর পরপরই সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক আপিল করেন।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট এ রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বৈধ ঘোষণা দেয়।

পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীরা। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

এই রায়ের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়।

বর্তমান আপিলকারীরা ও তাঁদের অবস্থান

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে নতুন করে আবেদন করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১৬ অক্টোবর একই রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।

তদ্রূপ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গত বছরের ২৩ অক্টোবর একই আবেদন দাখিল করেন।

এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও এ বিষয়ে আপিল করেন।

আইনজীবীদের প্রত্যাশা

ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন,

“তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা জনগণের আস্থা ও নির্বাচনী নিরপেক্ষতা পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য। আদালতের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া কোনো ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা সংবিধানবিরোধী হতে পারে, তাই আপিল বিভাগকে এ বিষয়ে সংবিধানসম্মত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ মামলার শুনানি শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ২০২৬ সালের নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নটি রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন