শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় হামাস ও দুগমুশ গোত্রের সংঘর্ষে নিহত ২৭, নগরীতে আতঙ্ক

গাজা নগরীতে হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় দুগমুশ গোত্রের সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে দক্ষিণ গাজার জর্ডানিয়ান হাসপাতালের নিকটে এই রক্তক্ষয়ী লড়াই হয় বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল ও নিরাপত্তা সূত্র।

সংঘর্ষের সূচনা ও হতাহতের বিবরণ

হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, হামাসের নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা নগরীর একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায়। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলাকালে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘর্ষে দুগমুশ গোত্রের ১৯ জন এবং হামাসের আট যোদ্ধা প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘটনার সময় হামাস বাহিনী তেল আল-হাওয়া এলাকার একটি আবাসিক ভবন ঘিরে ফেলে, যেখানে দুগমুশ যোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন। প্রায় তিন শতাধিক হামাস সদস্য ভবনটিতে অভিযান চালালে ভয়াবহ গোলাগুলি শুরু হয়।

বাসিন্দাদের আতঙ্ক ও বাস্তুচ্যুতি

তীব্র সংঘর্ষে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলির মধ্যে পড়ে শতাধিক পরিবার নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ের সন্ধানে পালিয়ে যায়।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,

“মানুষ এবার ইসরায়েলি হামলা থেকে পালাচ্ছে না, পালাচ্ছে নিজেদের লোকদের কাছ থেকে।”

গাজার অনেক পরিবার পূর্বে ইসরায়েলি হামলায় একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন সেই মানুষগুলো অভ্যন্তরীণ সহিংসতা থেকে বাঁচতে আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

দুগমুশ গোত্রের অভিযোগ

দুগমুশ গোত্রের একটি সূত্র স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হামাস যোদ্ধারা এমন একটি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে যা একসময় জর্ডানিয়ান হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

আল-সাব্রা এলাকায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর সেখানে দুগমুশ পরিবারের কয়েকটি সদস্য আশ্রয় নিয়েছিল। সূত্রটির দাবি, হামাস তাদের উচ্ছেদ করে ভবনটিকে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, যা সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়।

পুরনো শত্রুতা ও বর্তমান উত্তেজনা

দুগমুশ গোত্র গাজার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সশস্ত্র উপজাতিগুলোর একটি। তাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক বহুদিন ধরেই বৈরিতাপূর্ণ। ২০০৭ সালে হামাসের গাজা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুগমুশ যোদ্ধারা সময় সময় হামাসবিরোধী সশস্ত্র তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন।

অতীতেও এই গোত্রের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে “জায়তুন যুদ্ধ” চলাকালে হামাস দুগমুশ গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়, যা আজও গোত্রীয় প্রতিশোধের রাজনীতিকে জীবিত রেখেছে।

পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ

সংঘর্ষের পর গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় এখনো হামাস বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। তেল আল-হাওয়া, আল-সাব্রা ও জর্ডানিয়ান হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান চলছে।

এদিকে, হামাসের মুখপাত্র বলেছেন,

“গাজার অভ্যন্তরে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে দেওয়া হবে না।”

মানবাধিকার সংস্থা “আল-মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস” জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে অন্তত ১৪টি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং নারী-শিশুসহ কয়েক ডজন আহত। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের পরও ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণ সহিংসতা গাজাকে নতুন মানবিক সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন