বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

“রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল জীবন ঘনিষ্ঠ কবি ছিলেন”—শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার

ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনেই জীবনঘনিষ্ঠ কবি। তাঁরা মানুষের কল্যাণ, মানবিকতা এবং মনুষ্যত্বের বিকাশের কথা বলেছেন। তাঁদের কবিতা, গান, প্রবন্ধ আমাদের জীবনের নানাবিধ সংকট ও দুঃখ-দুর্দশার মুহূর্তে আশার আলো জাগায়।”

তিনি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির মিলনায়তনে “রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী” উপলক্ষে আয়োজিত “দেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাঠ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ড. আবরার বলেন, “আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল আমাদের শৈশবের অনিবার্য অংশ। মানুষের জীবনে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, কষ্ট, উল্লাস, ভালোবাসা—সবই আছে। সাহিত্য, কবিতা, সংগীত আমাদের এই বাস্তবতাকে সহজ করে তোলে।”

তিনি মধ্যযুগের কবি এবং রবীন্দ্র-নজরুলের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, “মধ্যযুগের কবি বলেছেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য।’ নজরুলের কণ্ঠেও আমরা শুনেছি—‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান।’ রবীন্দ্রনাথ বঙ্গজননীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—‘মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।’ এই কথাগুলো নিছক কবিতা নয়, বরং মানবিক চেতনার শিকড়।”

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্র-নজরুল

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে ড. আবরার বলেন, “আজকের দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে মানবিকতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ক্রমেই কমছে। একে অপরকে নির্যাতন, নিপীড়ন করতে মানুষ দ্বিধা করছে না। বিশ্বজুড়ে রণদামামা বাজছে। এর ফলে মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে, মানবতা বিপন্ন হচ্ছে।”

তিনি নজরুলের অমর পংক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, “নজরুল বলেছেন—‘আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না।’ অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ এই কথাগুলো আমাদের জন্য এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।”

ইতিহাসের রক্তাক্ত নদী এবং জয়গাথা

ড. আবরার দার্শনিক উইল ডুরান্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “উইল ডুরান্ট বলেছেন, মানুষের ইতিহাস যেন এক রক্তবাহী নদী। মানুষ পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুরতায়, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে যে রক্ত ঝরিয়েছে, সেই রক্ত বয়ে চলেছে নদীর স্রোতে। তবে নদীর দুই তীরে কবিতা, সঙ্গীত, ভাস্কর্যের মাধ্যমে মানুষ জীবনের জয়গাথা রচনা করছে।”

তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল সেই ভয়াবহ পৃথিবীতে জীবনের জয়গান গাইতে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁদের রচনা তাই আমাদের জন্য চিরকাল প্রাসঙ্গিক। মানবিক চেতনাকে জাগ্রত করতে, সমাজের অমানবিকতা রোধ করতে তাঁদের সাহিত্য, কবিতা ও গান আমাদের পড়তে হবে, বুঝতে হবে।”

সাহিত্য মানুষের মনন ও সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

ড. আবরার বলেন, “সাহিত্য শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো কবিরা মানুষের চিন্তাকে আলোকিত করেছেন, মানুষকে জাগ্রত করেছেন। তাঁরা আমাদের সাহস দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, মানুষকে ভালোবাসতে। তাঁদের সৃষ্টির মানবিক আবেদন আমাদের দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার শিক্ষাও দেয়।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মোরশেদ শফিউল হাসান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম প্রমুখ। বক্তারা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্যিক অবদান এবং তাঁদের লেখা আজকের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক সংকটে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের রচনা মানুষের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে আছে। তাঁদের সাহিত্য আমাদের সমাজকে মানবিকতার পথে এগিয়ে নিতে পারে।

“তাঁদের রচনা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে এবং থাকবে,” বলেন উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন