বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

৫৭ সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন: বাদ পড়লো শেখ পরিবার ও আওয়ামী নেতাদের নাম


দেশের ৫৭টি সরকারি কলেজের নাম থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ শেখ পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নাম বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত ও স্থানভিত্তিক নতুন নামকরণ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক সরলতা, বাস্তবিক পরিচিতি এবং স্থানীয় জনগণের ব্যবহৃত প্রচলিত নামে ফিরতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৩ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৮ মে ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের চিঠির আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসমূহের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোকে তা দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, “প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষাগত নথিপত্রে সংশোধিত নামসমূহ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) দপ্তরকে ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ এবং সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর ই-মেইলে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

পরিবর্তিত কিছু কলেজের নাম:

  • সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ, ভোলা → ভোলা সরকারি মহিলা কলেজ
  • সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, পল্লবী, ঢাকা → পল্লবী সরকারি কলেজ
  • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি মহাবিদ্যালয়, কালিয়াকৈর, গাজীপুর → কালিয়াকৈর সরকারি কলেজ
  • সরকারি শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ → কোটালীপাড়া সরকারি আদর্শ কলেজ
  • সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ, ডাসার, মাদারীপুর → ডাসার সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়
  • সরকারি মুজিব কলেজ, সখিপুর, টাঙ্গাইল → সখিপুর সরকারি কলেজ
  • সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, রূপসা, খুলনা → রূপসা সরকারি কলেজ
  • সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, মিরপুর, ঢাকা → মিরপুর সরকারি মহিলা কলেজ
  • সরকারি শেখ রাসেল ডিগ্রি কলেজ, রাজৈর, মাদারীপুর → লুন্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজ
  • সরকারি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, ফুলবাড়িয়া → ফুলবাড়িয়া সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কলেজগুলোর দীর্ঘ ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নামের কারণে মাঠপর্যায়ে নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। শিক্ষার্থী ভর্তি, ফলাফল প্রকাশ, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছিল। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও উঠছিল, বিশেষ করে নির্বাচনী সময়ে।

স্থানীয় জনগণের ব্যবহার করা প্রচলিত নাম এবং সংক্ষিপ্ত পরিচয় ফিরিয়ে আনলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত কার্যক্রমে অধিক কার্যকর হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

এই সিদ্ধান্তে কলেজ শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসনের অনেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালেও একটি অংশের মতে, এ ধরনের নাম পরিবর্তন রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবেলার একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ হলেও, জাতীয় নেতাদের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং প্রশাসনিক বাস্তবতা ও শিক্ষার পরিবেশকে আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখতে নেওয়া হয়েছে।

নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, পরিচিতি ও ব্যয়সংকোচনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার তাগিদও উঠে এসেছে শিক্ষা মহলে।