বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পাদকীয় – মণিপুরে জাতিগত সংঘাত কি ভারতের সংহতির ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে?

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট রাজ্য মণিপুর। ভৌগোলিকভাবে সীমান্তবর্তী এবং জাতিগতভাবে বহুস্তরবিশিষ্ট। অথচ এই ছোট্ট রাজ্যটিই বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচেয়ে গভীর সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিগত সংঘাত, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতাবোধ একত্রিত হয়ে আজ মণিপুরকে এক বিস্ফোরক অবস্থায় নিয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে—এই উত্তেজনাই কি ভারতের বহুলগর্বিত অখণ্ডতা এবং জাতিসত্তার ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলবে?

গত দুই বছরের সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত, হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই, লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত। Meitei এবং Kuki-Zo সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত বিভেদে বিভক্ত মণিপুর এখন আর শুধু একটি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংকট নয়—এটি ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সহনশীলতা ও ভারসাম্য রক্ষার একটি বড় পরীক্ষা।

সাম্প্রতিক গ্রেফতার, বিক্ষোভ, ইন্টারনেট বন্ধ, কড়াকড়ি কফ্রিউ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এক অনিয়ন্ত্রিত অস্থিরতার রূপ নিয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের মধ্যে ভারতের মূলধারার প্রতি আস্থা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। যারা রাষ্ট্রকে আর “নিজেদের” মনে করে না, তারা কখনোই ঐক্য রক্ষা করতে পারে না।

মণিপুরের এই সংঘাত শুধু পুলিশের বুলেট আর রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। এটি এমন এক সংকট যা গভীর মনোযোগ, ঐতিহাসিক সত্যের স্বীকৃতি এবং একটি আন্তরিক রাজনৈতিক সংলাপ দাবি করে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, জমি ও পরিচয়ের প্রতি যে অবহেলা ও ভ্রান্তনীতি বিগত দশকে প্রয়োগ হয়েছে—তা শুধরে না নিলে শুধু মণিপুর নয়, ভারতের অন্য প্রান্তের বিচ্ছিন্নতাবাদী সত্তাগুলোও মাথাচাড়া দিতে পারে।

ভারতের সংবিধান বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু সম্প্রদায়ের একটি যৌথ জীবনচর্যার ঘোষণা। কিন্তু যখনই কোনো জাতিগোষ্ঠী অনুভব করে যে তারা অধিকার পাচ্ছে না, কিংবা তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ পক্ষপাতদুষ্ট—তখন ঐক্য স্লোগানে রূপ নেয়, বিশ্বাসে নয়।

আজকের মণিপুর ভারতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে একটি সতর্কবার্তা। যদি এখনও সময়মতো কার্যকর, ন্যায়ভিত্তিক এবং সমন্বিত রাজনৈতিক উদ্যোগ না নেওয়া হয়—তাহলে শুধু একটি রাজ্য নয়, ভারতের অখণ্ডতা ও বহুত্ববাদই প্রশ্নের মুখে পড়বে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন