শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসরাইলের সঙ্গে ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাতিল করলো স্পেন

ফিলিস্তিন সংকটে কড়া বার্তা; অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার ডাক ইউরোপীয় ইউনিয়নকে

ইসরাইলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Rafael Advanced Defense Systems-এর সঙ্গে করা ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি বাতিল করেছে স্পেন। স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধনীতি ও গাজায় বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর ঠিক চারদিন আগে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম Ara এবং Middle East Eye–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তিটি ছিল Spike LR 2 ধরনের অত্যাধুনিক গাইডেড মিসাইল কেনার ওপর ভিত্তি করে। তবে, গাজায় চলমান সহিংসতা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ওঠার পর এই ক্রয়প্রক্রিয়া বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় স্পেন সরকার।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ

ইসরাইলি কোম্পানি রাফায়েল জানিয়েছে, তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বাতিল নোটিশ পায়নি। তবে স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্পেনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্প্রতি একাধিকবার ইসরাইলবিরোধী অবস্থান তুলে ধরেছে। চলতি মে মাসে তারা ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ একাধিকবার ইসরাইলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস জানান, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতামূলক সামরিক চুক্তি স্থগিত করে, আমরা সেই আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে মিত্র রাষ্ট্রগুলোকেও এই চুক্তি বিরত রাখার অনুরোধ করছি।”

এটি স্পেনের প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল নয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলেও তারা ১৫ মিলিয়ন ডলারের একটি গুলি সরবরাহ চুক্তি বাতিল করেছিল, যা রাফায়েল ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছিল। তখনও একই কারণে—ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন—তাদের অবস্থান ছিল দৃঢ়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পেনের এ সিদ্ধান্ত শুধু প্রতিরক্ষা নয়, তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি সুস্পষ্ট মানবিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা, যেখানে একটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র গণহত্যার প্রেক্ষিতে বড় অঙ্কের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করে মানবিক বার্তা দিচ্ছে।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় নারী-শিশুসহ লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে। ইসরাইলের এই সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বাড়ছে। জাতিসংঘের অনেক সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তেল আবিবের অবস্থানে বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি।

স্পেনের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

তথ্যসূত্র: Middle East Eye, Ara, Spanish Defense Ministry


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন