বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ভূমিকম্পে দ্রুত রেসপন্সে প্রস্তুত স্পেশাল ফোর্স: ফায়ার সার্ভিস ডিজি

ক্র্যাব সদস্যদের নিয়ে কর্মশালায় জরুরি উদ্ধার ও সচেতনতা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও সক্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ঢাকার অপারেশনাল ইউনিটকে মিরপুরে স্থানান্তর এবং দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দিতে ৬০ সদস্যের বিশেষ উদ্ধারকারী ফোর্স গঠনের কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।

তিনি বলেন, “ভূমিকম্পের সময় আমরা নিজেরাও ঝুঁকিতে পড়তে পারি, কিন্তু রেসকিউ টিমকে তো নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এজন্য আলাদাভাবে প্রশিক্ষিত এবং প্রস্তুত একটি কোর টিম আমরা পূর্বাচলে স্থাপন করেছি। তারা বড় ধরণের দুর্যোগে—বিশেষত ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডে—তাৎক্ষণিকভাবে রেসপন্স করবে।”

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর সদস্যদের অংশগ্রহণে আয়োজিত অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

দ্রুত রেসপন্স টিম বিভাগীয় শহরেও

ঢাকার পাশাপাশি, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০ সদস্যের করে স্পেশাল রেসপন্স ইউনিট গঠনের কাজ চলছে বলে জানান ডিজি। “যদি চট্টগ্রামে ভূমিকম্প হয়, তাহলে সেখানকার টিম তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে ঢাকার বিশেষ দলকেও সেখানে পাঠানো যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই টিমগুলো ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।”

জনবল ও স্টেশন সংকটের কথা তুলে ধরলেন ডিজি

ভবিষ্যতে দুর্যোগে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য ঢাকায় জনবল, ইকুইপমেন্ট এবং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ডিজি বলেন, “১৮-২০টি স্টেশনের মধ্যে বড় ভূমিকম্পে ৮-১০টি স্টেশন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। তখন বিকল্প টিম ও প্রস্তুতি দরকার।”

তিনি ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন—“আমরাও নিরাপদ না। আমাদের পরিবারগুলোও ঢাকায় থাকে। কাজেই সম্মিলিত প্রস্তুতি ছাড়া সামনে এগোনো যাবে না।”

পাঠ্যপুস্তকে ফায়ার সেফটির প্রস্তাব

ডিজি জানান, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ফায়ার সেফটি বিষয়ে শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “এ বছর বাস্তবায়ন না হলেও আগামীতে অন্তর্ভুক্তির আশা করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে।”

ফায়ার সার্ভিসের কাজের স্বীকৃতি ও মিডিয়ার ভূমিকা

ফায়ার সার্ভিসের ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে ডিজি বলেন, “ভুল হতে পারে, তবে ইচ্ছাকৃত দুর্নীতি বা অনিয়মে আমরা নেই এবং থাকব না। আগুন বা দুর্যোগে যখন সবাই পালায়, তখন আমাদের ফাইটাররা জীবন ঝুঁকি নিয়ে প্রবেশ করে।”

গণমাধ্যমের ভূমিকাকে তিনি “আস্থা সৃষ্টির একটি বড় মাধ্যম” হিসেবে অভিহিত করেন এবং সঠিক তথ্য প্রচারে সহযোগিতা চেয়েছেন।

ক্র্যাব নেতাদের মতামত

ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, “প্রথম সাড়া প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে বড় দুর্যোগ মোকাবেলায় শুধু তাদের ওপর নির্ভর করে চলা যাবে না। সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও প্রশিক্ষিত হতে হবে।”

তিনি প্রস্তাব করেন, “অগ্নি ও ভূমিকম্প বিষয়ক সুরক্ষা জ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করা হোক।”

সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানো এবং সচেতনতা কার্যক্রম জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন