শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজনীতিবিদরা পালিয়েছেন, আমলারা পুনরুজ্জীবিত — অর্থনীতি নিয়ে সিপিডির শ্বেতপত্রে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য


রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা, ব্যবসায়ীরা দুর্বল এবং আমলারা এখন পূর্ণ শক্তিতে পুনরুজ্জীবিত—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক বহুপাক্ষিক অংশীজন বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সিপিডি ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।

আমলাতন্ত্রের উত্থান এবং চোরতন্ত্রের ইতিকথা

দেবপ্রিয় বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—যেখানে আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। তবে বর্তমানে রাজনীতিবিদরা পালিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ, আর আমলারা হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে প্রভাবশালী।”

এনবিআর বিভাজন নিয়ে অসন্তোষ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভক্তিকরণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এনবিআর-কে দুই ভাগ করার সুপারিশ ছিল শ্বেতপত্রে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে ভুলভাবে। এতে পেশাজীবীদের স্থান সংকুচিত হয়েছে এবং শাসন কাঠামো আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে।”

অর্থনীতির চিত্র: বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মুদ্রানীতি

তিনি জানান, দেশে বর্তমানে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে, অথচ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম। মুদ্রানীতিও কাঙ্ক্ষিত প্রতিফলন দিতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশে নেমে এলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “দারিদ্র্যের হার এবং চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষভাবে যুব দারিদ্র্যের হার উদ্বেগজনক। বিনিয়োগপ্রবণ নয়, বরং ভোগতাড়িত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

প্রধান উপদেষ্টার সহকারীর দৃষ্টিভঙ্গি

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রাকে বিশ্লেষণ করতে গেলে ১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিত ও বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব অনিবার্য। নেতিবাচক ধারণা থেকে বের হয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের এগোতে হবে।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত না হলে অনেক কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।”

বাজেট প্রণয়নে নতুন ধারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং র‌্যাপিড-এর নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ বলেন, “যারা এতদিন বাজেট নিয়ে মন্তব্য করতেন, তারা এখন বাজেট প্রণয়নে যুক্ত, তাই এবারের বাজেটে টাস্কফোর্স, কমিশন এবং শ্বেতপত্রের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এই বাজেটে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কর-জিডিপি রেশিও ১০.৫ শতাংশ নয়, ১৪-১৫ শতাংশ হওয়া উচিত।” কর অব্যাহতি এবং টিআইএনধারীদের কার্যকারিতা নিরূপণের আহ্বান জানান তিনি।

সম্মিলিত সুপারিশ

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবধর্মী বাজেট প্রণয়ন জরুরি। রাজস্ব বাড়ানো, মুদ্রানীতি কার্যকর করা এবং দারিদ্র্য হ্রাসে পরিকল্পিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন